নিজস্ব প্রতিবেদক : এবার কথা উল্টিয়ে রাজশাহীর মেস মালিকরা নিজেদের ইচ্ছেমতো আবারও ভাড়ার জন্য নোটিশ দিয়েছেন। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন মেসের ২ লাখ শিক্ষার্থী। জেলা প্রশাসনের সাথে বসে গৃহীত সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে রাজশাহীর বিভিন্ন মেসে থাকা দেশ-বিদেশের শিক্ষার্থীদের সাথে আবারও ‘নাটক’ শুরু করেছেন তারা।
সোমবার ‘রাজশাহী মহানগর মেস মালিক সমিতি’ নামের একটি সংগঠন ‘জরুরি নোটিশ’ দিয়ে জানিয়েছে, এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মেসভাড়ার পুরো টাকা দিতে হবে। অথচ মার্চ মাস থেকে শিক্ষার্থীরা বাসায়। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন মেসের শিক্ষার্থীরা।
মেস মালিকদের নতুন সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, সব মেসমালিক তাঁদের প্রতিষ্ঠানের বোর্ডারদের কাছ থেকে এপ্রিল, মে ও জুন মাসের সিটভাড়া সম্পূর্ণ গ্রহণ করবেন। তবে যেসব পরিবার করোনাভাইরাসের কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, সেই পরিবারের বোর্ডারদের ক্ষেত্রে মেসের মালিকেরা নিজ বিবেচনায় মানবিক দিক থেকে ভাড়া সর্বোচ্চ মওকুফের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন এবং ছাড়কৃত ভাড়া আদায়ের বিবরণী নথিভুক্ত করে রাজশাহী মহানগর মেস মালিক সমিতিতে অনুলিপি প্রদান করবেন।
জুলাই মাসের ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সমিতি কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে। সব মেসমালিক তাঁদের প্রতিষ্ঠানের বোর্ডারদের সঙ্গে সিট ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে সদয় আচরণ করবেন। তবে কোনো বোর্ডার বিরূপ আচরণ করলে তা সমিতিকে জানাতেও বলা হয় ওই নোটিশে।
এমন নোটিশের পর শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। তারা জানান, এর আগে মেস ভাড়ার ৪০ শতাংশ মওকুফের সিদ্ধান্তও ছিল অযৌক্তিক। তবুও জেলা প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখে মেনে নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু কিসের ক্ষমতাবলে মেস মালিকরা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশনের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখাচ্ছে? ভাড়ার জন্য আবারও নতুনভাবে নোটিশ দেয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।
এবিষয়ে জানতে রাজশাহী মহানগর মেস মালিক সমিতির সভাপতি মো. এনায়েতুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, ‘মেস মালিকরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে আমার কোনো ভূমিকা নেই। তবে সেই সভায় তাঁদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সর্বোচ্চ মানবিকতা দেখাতে অনুরোধ করা হয়।’
এর আগে ‘রাজশাহীতে মেসভাড়া মওকুফের দাবি’ শিরোনামে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের নজরে আসে। এরইমধ্যে শিক্ষানগরীর ২ লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রীর যৌক্তিক দাবির পক্ষে লেখালেখি শুরু করেন স্থানীয় সাংবাদিক আমানুল্লাহ আমান। এবিষয়ে টেলিভিশন চ্যানেল ও সোশ্যাল মিডিয়াতে জোরালো দাবি উত্থাপন করেন তিনি।
এরপর গত ১০ মে রাজশাহী জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, মেট্রোপলিটন পুলিশ ও মেস মালিক সমিতির এক যৌথ সভায় মেস ভাড়ার ৪০ শতাংশ মওকুফের সিদ্ধান্ত হয়। মেস মালিকরা সভায় এ সিদ্ধান্ত মানলেও পরবর্তীতে নানাভাবে মেস ভাড়া আদায়ের চেষ্টা করেন। ভাড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিতে থাকেন তারা।
Leave a Reply